Pages

শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০১৫

নতুন কিছু নেই, তবু কেন খালেদার সংবাদ সম্মেলন?

দীর্ঘ ৫৩ দিন পর আজ শুক্রবার গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে এসেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ৩১০০’র বেশি শব্দের একটি লিখিত বক্তৃতা পড়েছেন। কিন্তু এই দীর্ঘ বক্তব্যে নতুন তেমন কিছু উঠে আসেনি। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পুরোনো দাবির পাশাপাশি বর্তমান সংকট সমাধানের লক্ষ্যে আরও কিছু দাবি তুলে ধরেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন তেমন কিছু ও আন্দোলনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না থাকায় অনেকের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, হঠাৎ কেন এই সংবাদ সম্মেলন?
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এই সংবাদ সম্মেলন ডাকার পেছনে সম্ভাব্য তিনটি কারণ থাকতে পারে। সেগুলো হলো-বিএনপি কেন আন্দোলন করছে, তা সরকার এবং জনগণকে আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া; সমালোচনার মুখে আন্দোলন-সহিংসতা নিয়ে আওয়ামী লীগের অতীত তুলে আনা; এ ছাড়া দীর্ঘদিন থেকে খালেদা জিয়াকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি, এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তিনি যে সুস্থ আছেন, দৃঢ় আছেন, কাজ করছেন, এ বার্তাটি দেওয়াও একটি উদ্দেশ্য হতে পারে। ওই নেতা বলেন, তিনিও দলের চেয়ারপারসনের বক্তব্যে নতুন কিছু পাননি। অসহযোগ দেওয়ার একটা আলোচনা চলছিল। অনেকে ধারণা করেছিলেন নতুন কর্মসূচি আসবে, তা আসেনি।
খালেদা জিয়ার দীর্ঘ বক্তৃতায় দেখা যায়, তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বা এ ধরনের একটি পদ্ধতি পুনর্বহাল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান, গুম-খুন, বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যে নাশকতা এবং আওয়ামী লীগের অতীত আন্দোলন ও সে সময়ের নাশকতা, সংলাপ; এসব বিষয়ের ওপরই গুরুত্ব দিয়েছেন।
গত ৬ জানুয়ারি আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে দল এবং জোটের নিয়মিত বিবৃতিতে এ বিষয়গুলো প্রায় প্রতিনিয়তই উঠে এসেছে।
বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এ কথাগুলো বিভিন্ন সময়ে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া নিজে বলার আলাদা একটি গুরুত্ব আছে। বিশেষত সরকার যখন নাশকতার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে আন্দোলনকে একটি জঙ্গি তৎপরতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, তখন এ ধরনের জবাব দেওয়াটা দরকার ছিল বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, বিএনপি দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছেন, বিএনপি কেন আন্দোলন করছে। খালেদা জিয়া আন্দোলনে যাওয়ার আগেই সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তা সরকার আমলে নেয়নি। বিষয়টি নতুন করে জনগণের সামনে তুলে আনা এবং আন্দোলনের যৌক্তিকতা আবার তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপি শুরু থেকেই সংলাপের দাবি জানিয়ে আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও দেশে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবেই এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সরকার সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে চলেছে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়া চলমান সংকট সমাধানের জন্য দাবি আকারে কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলো হলো-গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের মুক্তি, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা, পুলিশি ও যৌথবাহিনীর ‘হয়রানি’ বন্ধ করা এবং হয়রানিমূলক সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া; সভা-সমাবেশ-মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত সব ধরনের বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করা।
বিএনপির ওই জ্যেষ্ঠ নেতার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন হলো, এর মাধ্যমে খালেদা জিয়া এটি পরিষ্কার করতে চেয়েছেন যে, বিএনপি সংলাপের জন্য আসলেই আন্তরিক। বিএনপি সংকটের সমাধান চায়। এ জন্য পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কী করা দরকার, তা তিনি তুলে ধরেছেন। সরকার এসব দাবি পূরণ না করলে দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে। এর মাধ্যমে তিনি বল আবারও ‘সরকারের কোর্টে’ ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন