Pages

বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

যশোরের মিনি চাইনিজ ও রেস্টুরেন্ট গুলোতে আলো আধারের মাঝে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ


যশোরের মিনি চাইনিজ এবং ফার্স্টফুড দোকানের আড়ালে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। আলো-আঁধারির মাঝে ছোট ছোট কেবিন তৈরি করে শহরের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান। ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা এসব রেস্টুরেন্টের প্রধান আয় আগতদের কাছে থেকে পাওয়া ‘ওয়েটিং বিল’। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস চলাকালীন ‘ওয়েটিংয়ের’ নামে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। শহরের অলিতে-গলিতে গজিয়ে ওঠা এসব মিনি চাইনিজ ও ফাস্টফুডের দোকান নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। স্থানীয় প্রভাবশালী ও পুলিশকে ম্যানেজ করে চলে বলে এসবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস করেন না কেউ। যদিও ইতমধ্যে অসামাজিক কার্যকালাপের জন্য যশোর শহরের গাড়িখানা রোজের ওয়ালটোনের পেছনে ধানসিড়ি নামক মিনি চাইনিজে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে কেবিন গুলো ভেঙ্গে দেয়। এমনি ভাবে অভিযান চলেছে শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় অবস্থিত সাকো ডে লাইটেও। কিন্তু তাতে থেমে নেয় অন্য মিনি চাইনিজ এবং ফার্স্টফুডের মালিকরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের বিভিন্ন এলাকার অলি-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে মিনি চাইনিজ ও ফাস্টফুডের দোকান। বাহ্যিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এসব রেস্টুরেন্টের ভিতরে কী আছে তার খবর কেউ রাখে না। বেশিরভাগ দোকানের ভিতরে ছোট ছোট কেবিন তৈরি করা। সেগুলোতে আবার পৃথক কপাট (দরজা) আছে। ভিতর থেকে সে কপাট আটকানো যায়। বাহির থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এসবের ভিতরে কি আছে। বিশেষ করে যশোর শহরের আরোবপুর মোড়ে ক্যাফে রাইডার্স, ঈদগাহের সামনে কুটুমবাড়ি, জেল রোডে ভোজন বিলাশ, রেল রোডের ক্যাফে মেরিয়টসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে কেবিন বানিয়ে ঘন্টা চুক্তিতে ভাড়া দিচ্ছে উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের কাছে। এ সব কেবিন গুলোতে ঘন্টা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে ভাড়া নেয় এসব ক্রেতারা। তারা টাকার বিনিময়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ক্যাফে ব্লুম এর দায়িত্বরত কামরুল হাসান বলেন, আমাদের ক্যাফেটি সিটি টিভি ক্যামেরার আওতায়, এখানে কোন অসামাজিক কর্মকান্ড হয় না। তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্যাফেতে অধিক মুনাফার জন্য অসামাজিক কাজ করার সুযোগ করে দেয় সুনেছি, তবে তিনি বলেন প্রশাসনের উচিৎ এ গুলো বন্ধ করা করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী বলেন, এসব রেস্টুরেন্টগুলোতে মাসোহারা নেয় না এমন কিছু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য অনেক সময় এসব রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিযান চালায়। কিন্তু তারা অভিযানে আসার আগেই অসাধু সোর্সরা রেস্টুরেন্ট মালিকদের সংকেত দিয়ে দেয়। এছাড়া মালিকরা নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে রেস্টুরেন্ট আলোকিত করে ফেলি।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ঠ শিক্ষাবীদ আব্দুল গণি বলেন, হঠাৎ করেই আমাদের সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা মূল্যবোধ,প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সমাজে প্রবেশ করেছে। অথচ এটাকে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তা আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, একটা মূল্যবোধকে ধারণ করতে গেলে সময় লাগবে। সেই সময় এখনও অতিক্রান্ত করতে পারিনি আমরা। সে কারণেই এ ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এটাকে ‘বদহজম’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বন্ধ করার জন্য আমাদের রেগুলেটরি এজেন্সি ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে সচেষ্ট হতে হবে। পাশাপাশি আমাদের মূল্যবোধ ও সচেতনতাকে জাগ্রত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ব্যাপারে যশোরের বিশিষ্ঠ সাংবাদিক প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি একরাম-উদ-দৌলা বলেন, যশোর শহরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিনি চাইনিজ রেন্টুরেন্টে। এসব রেস্টুরেন্টের অধিকাংশই অনৈতিক কর্মকান্ডের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রেস্টুরেন্টের কেবিন গুলো দেখলে মনে হয় এ যেন প্রেমকুঞ্জ তৈরী করা হয়েছে। এ জন্য ওই সব রেস্টুরেন্ট গুলোতে প্রতিনিয়ত যুবক-যুবতিদের আনাগোনা লেগে থাকে। এ সুযোগে দোকান মালিকরা কামিয়ে নিচ্ছেন অধিক মুনাফা। বাজার দরের চেয়ে ৪/৫ গুন বেশি দামে পন্য বিক্রি করে হয়ে যাচ্ছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। ক্রেতাদেরও কোন অভিযোগ নেই। কারণ তারা পাচ্ছেন বাড়তি নিরাপত্তার সুবিধা। তিনি বলেন প্রশাসনের উচিৎ এই অবক্ষয় থেকে সমাজকে রক্ষা করা।
এ ব্যাপারে র‌্যাব-৬ এর ইন্টিলিজেন্ট জিল্লুর রহমান বলেন, যদি খাবারের ক্যাফেতে অসামাজিক কর্মকান্ড চলে তবে আমরা অবশ্যয় আমাদের কোম্পানি কমান্ডারকে নিয়ে অভিযান চালাবো।
এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতের জালাল উদ্দীন বলেন, যে সব রেস্টুরেন্টে কেবিন করে অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে আমরা সে সব রেস্টুরেন্ট গুলো অভিযান চালাচ্ছি, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন আজ থেকেই আবার অভিযান পরিচালনা করবো আমরা।
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন