Pages

বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮

যশোরের সেই শোভাযাত্রা

 ১৯৮৫ সালের ১৪ এপ্রিল (বাংলা ১৩৯২ সন) পয়লা বৈশাখের ভোরে দেশের প্রত্যন্ত জেলা শহর যশোরে বের হয়েছিল এক বর্ণিল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রার শ চারেক অংশগ্রহণকারীর পক্ষে তখন অনুমান করা সম্ভব ছিল না, পরের বছরগুলোয় এটা কীভাবে দ্রুত জেলার সীমানা ডিঙিয়ে যাবে এবং বাংলা বর্ষবরণের এক প্রধান ঐতিহ্যের জন্ম দেবে।
বাঘ, দৈত্য, ভূতের মুখোশ পরে যশোরের চারুপীঠ চত্বর থেকে বের হওয়া সেই শোভাযাত্রা ছোট পরিসরের হলেও এর সঙ্গে অনেক মিল আজকের দিনের রাজধানীর শাহবাগ-রমনা এলাকায় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া বিশাল বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার। গত বছর ইউনেসকোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা লাভ করেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, যার বীজ আসলে লুকানো ৩২ বছর আগে যশোরের ওই ছোট্ট শোভাযাত্রাটিতে।
ওই শোভাযাত্রার অন্যতম উদ্যোক্তা চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামিল শামীম। তিনি গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৮৫ সালে চারুপীঠের উদ্যোগেই বাংলাদেশে প্রথম বর্ষবরণের শোভাযাত্রা হয়েছিল। পরের বছর যশোরের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে এটি আরও জমকালো আকার নেয়। কয়েক বছর পরে ১৯৮৯ সালে আমি ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে হরেক রঙের মুখোশ তৈরি করিয়ে রাজধানী শহরে প্রথম শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ নিই। ওই উদ্যোগে লোকশিল্প গবেষক তরুণ ঘোষ অগ্রগামী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরের বছর ১৯৯০ সালে চারুশিল্পী পর্ষদ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শোভাযাত্রার নিয়ন্ত্রণ নেয়। তরুণ ঘোষের নকশায় তখন অপরূপ পোস্টার ছাপানো হয়। শুরুতে যশোরে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা, পরে ঢাকায় আনন্দ শোভাযাত্রা ও শেষে “মঙ্গল শোভাযাত্রা” নামকরণ করা হয়। ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদুল হক ও শিল্পী এমদাদ হোসেন “মঙ্গল শোভাযাত্রা” নামকরণের প্রস্তাব দেন। অচিরেই তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, জাতীয় উৎসবে রূপ নিল।’
শিল্পী তরুণ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও বাঙালির উৎসবের জন্য উপকরণ খুঁজছিলাম। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চেয়ে উৎসবের সাংস্কৃতিক দিকটিই আসলে মূল বিবেচ্য ছিল।’
যশোরের চারুপীঠের ওই শোভাযাত্রা এখনো তেমনি উদ্দীপনা নিয়েই বের হয়। এর পাশাপাশি যশোরের আরও কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন শোভাযাত্রা বের করে।
চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরিতে সাদা-কালো পোশাকে খালি পায়ে আমরা গভীর শোক পালন করি। ঠিক তার উল্টো অনাবিল আনন্দ, উৎসাহ আর উদ্দীপনায় বাংলা বর্ষবরণ উদ্যাপনের লক্ষ্যে যশোরে বর্ষবরণ শোভাযাত্রার সূচনা করা হয়েছিল। ওই শোভাযাত্রা মৌলবাদী গোষ্ঠীকে প্রতিহত করে গোটা যশোরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। এখন ঐক্যবদ্ধ করছে গোটা দেশকে।
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন