Pages

বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

পাঁচ ধরনের নেশায় আসক্ত ছিল ঐশী -সর্বশেষ ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করত ।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান খুনের ঘটনায় রহস্য দানা বাঁধছে। পুলিশের জেরার মুখে নিহত পুলিশ দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমানের এলোমেলো বক্তব্য পুরো ঘটনা নিয়ে গোয়েন্দাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঐশীর কাছ থেকে তথ্য বের করতে তাদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। আগে যে তথ্য দিয়েছে ঐশী, কিছু সময় পর তা অস্বীকার করছে। এ অবস্থায় পুলিশ দম্পতির প্রকৃত খুনির পরিচয় বের করতে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। ঐশীর তথ্য অনুযায়ী তার দুই বন্ধু জনি আর সাইদুলকে সন্দেহের তালিকার শীর্ষে রাখা হয়েছে। যদিও তাদের সংশ্লিষ্টতা এখনো পর্যন্ত পুলিশ পায়নি। তাদের গ্রেফতারে গতকাল সন্ধ্যার পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এদিকে পুলিশের জেরার মুখে ঐশী বলেছে, সে পাঁচ ধরনের নেশায় আসক্ত ছিল। সর্বশেষ ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করত নিয়মিত। আগে হেরোইন, প্যাথেডিন ও অ্যালকোহলে অভ্যস্ত ছিল। শুধু তাই নয়, ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি সে ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েছিল।গতকাল ছিল ঐশীসহ তিনজনের পাঁচ দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গতকালও জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী তাদের কাছে বাবা-মাকে হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিতি নিয়ে দুই রকম কথা বলেছে। একবার বলে সে একাই হত্যা করেছে। আরেকবার বলছে দুই বন্ধু জনি ও সাইদুলই বাবা-মাকে হত্যা করেছে। কিন্তু দুই বন্ধুর উপস্থিত থাকার পক্ষে কোনো যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি ঐশী। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঐশী বাদে হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী কেউ নেই। কাজের মেয়ে সুমি পুলিশকে বলেছে, সে নিজে হত্যাকাণ্ড দুটি দেখেনি। তাই ওই বাসায় কেউ ছিল কি না, তা তার জানা নেই। হত্যাকাণ্ডের সময় সে ছিল ঘুমিয়ে। ঘটনার পর তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে লাশ সরানোর জন্য সাহায্য নেওয়া হয়। গোয়েন্দারা এখন পর্যন্ত তদন্তে নিশ্চিত যে হত্যাকাণ্ড ঐশী একাই ঘটিয়েছে। কারণ হত্যাকাণ্ডে যে চাকু ব্যবহার করা হয়েছে তাতে একজনের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, মামলার বাদী ঐশীর চাচার দাবি_ এই হত্যাকাণ্ডে ঐশী নয়, অন্য কেউ জড়িত থাকতে পারে। ঐশীর এলোমেলো বক্তব্য, মামলার বাদীর দাবি এবং অন্য কারও সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না যাওয়ায় পুরো বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, জনি ও সাইদুলকে ঘিরেই এখন রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। এই দুজনকে পাওয়া গেলে সব রহস্য বের হবে বলে আশা তাদের। ঐশীর পলাতক এ দুই বন্ধুর বাড়ি বাসাবো ও মান্ডায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল সকালে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কারণ ও জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু দুই বন্ধুর বিষয়টি সামনে রয়েছে। এ দুই বন্ধুকে আটক করতে পারলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশু আইনের বিধান সামনে রেখে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঐশীকে জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ঐশীর বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় সাবধানতার সঙ্গেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই সে নিজের অবস্থান বদল করছে। খুনের ব্যাপারে তথ্য দেওয়ার চেয়ে নিজের জীবন-যাপন, বখে যাওয়া নিয়ে তথ্য দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে ঐশী। কিছু দিন আগে বাসা থেকে রাগ করে বের হওয়ার পর ১৫ দিন বন্ধু জনির এক গার্লফ্রেন্ডের বাসায় অবস্থানের কথা স্বীকার করেছে সে। ওই সময় জনির সঙ্গে তার দৈহিক সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু এভাবে থাকতে তার ভালো না লাগায় বাইরে বাবার সঙ্গে দেখা করে বাসায় ফিরে আসে। সেই থেকে তার মা ও বাবা দুজনের কেউই তাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। তার স্বাভাবিক চলাফেরায়ও বাধার সৃষ্টি করেন বাবা-মা। একপর্যায়ে ৩১ জুলাই মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। তাই মাকে কফিতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ওই ফোন থেকে বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলেছে। অনেক সময় মা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বাইরে গিয়ে মাদক সেবনের পর ফিরে এসেছে। বাবা-মাকে হত্যার আগে যে ‘নাইটাস’ নামে ১০টি ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিল তাও জনি তাকে সরবরাহ করেছে। বাবা-মাকে খাওয়ানো ঘুমের ওষুধ কোথা থেকে পেয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ঐশী গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, জনিই তাকে এগুলো সরবরাহ করেছে। এর আগেও জনি তাকে অনেকবার ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। দু-তিন বার বাবা-মাকে সেই ওষুধ খাইয়েছে সে। তাই কোথা থেকে ওষুধ কেনা হতো তা জনিই বলতে পারবে। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে বার বার নিজের অবস্থান বদলালেও গতকাল পর্যন্ত তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা ছিল না। কঠিন জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও ঐশীকে অবিচল দেখা গেছে। মাঝেমধ্যেই সে চতুরতার আশ্রয় নিচ্ছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, অঙ্ফোর্ডের নিয়মিত ছাত্রী ছিল না ঐশী। বহিরাগত ছাত্রী হিসেবে ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দিচ্ছিল। কিন্তু দুটি পরীক্ষা দিয়ে অন্যগুলো আর দেয়নি। ঐশী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে অধ্যয়নকালীন অষ্টম শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। ফলে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এরপর ২০১০ সালের ৯ জুন অঙ্ফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থী হিসেবে অষ্টম শ্রেণীতেই ভর্তি হয়। সেখানে ভর্তির কয়েক দিনের মাথায় অঙ্ফোর্ডের ইয়াবা সেবনকারী গ্রুপের সদস্য বাকিরের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। ধীরে ধীরে বাড়ে তাদের ঘনিষ্ঠতা। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। এই বাকিরের মাধ্যমে মরণ নেশা ইয়াবা সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে ঐশী। জোটে বহু বন্ধু। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা বলেন, রিমান্ডে থাকা রনি মূলত ঐশীর ইয়াবা খাওয়া ও ব্যবসার বন্ধু। আর জনি ও সাইদুল ড্যান্স পার্টি ও ডিজের বন্ধু। রনির সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা বিক্রিও করেছে ঐশী। এর ভাগও পেয়েছে সে। ঐশীর দাবি, রনি তাকে ব্যবসায় ঠকিয়েছে। যদিও এ নিয়ে তার ক্ষোভ নেই। আর জনির সঙ্গে বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে অংশ নিত। মজা করত, কিছু টাকা আয় করত।গতকাল ঐশী গোয়েন্দাদের কাছে বার বার মিনতি করেছে, তাকে যেন সংশোধন হতে একবারের জন্য সুযোগ দেওয়া হয়। সে ভালো জীবনে ফিরে আসতে চায়। এ পর্যন্ত সে যা করেছে তার সবই ভুল ছিল। পাশাপাশি সে এও বলেছে, তার বয়স তো ১৮ বছরের কম, তাই নিশ্চয়ই সে সংশোধনের সুযোগ পাবে। তাই বার বার সে বয়স ১৮ বছরের কম বলার চেষ্টা করছে।
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন