Pages

বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

রিমান্ডেও একটি ইয়াবার জন্য ব্যাকুল ঐশী!

যে নেশা জীবনের জন্য কাল হল সেই নেশাকে ভুলতে পারছে না ঐশী। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে থেকেও মাদকের জন্য হাঁস-ফাঁস করছে সে। মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। যেকোনো মূল্যে একটি ইয়াবা ট্যাবলেটের জন্য বারবার পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে কাকুতি-মিনতি করছে ঐশী। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।তদন্তকারী কয়েকজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসটোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, ঐশী নেশায় এতটাই বুদ হয়ে পড়েছিল যে, বাবা-মা তাঁর জীবনের কতবড় সম্পদ সেই কথাটিও ভুলে গিয়েছিল। তার উগ্র চলাফেরার পথে জন্মদাতাদের বাধা মনে করেছে। সন্তান হিসেবে বাবা-মার স্নেহ-মমতাও তাঁর কাছে তুচ্ছ মনে হয়েছে। যার কারণে, বাবা-মাকে হারালেও নেশাকে ভুলতে পারছে না সে। এখনও নেশা সামগ্রীর জন্য কিছুক্ষণ পর পর অস্বাভাবিক আচরণ করছে। চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ছে সময়ে সময়ে। খাওয়া-দাওয়ার চাহিদা না থাকলেও নেশা সামগ্রীর জন্য সে পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে-পায়ে পড়ছে বলেও সূত্রে জানা গেছে।পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাদকে কারণে অস্বাভাবিক হয়ে পড়া ঐশী মাঝেমধ্যে ভুল তথ্য দিয়েও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করছে। তাই তার কথার সঙ্গে গৃহকর্মী খাদিজা খাতুন ওরফে সুমির কথাও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তাঁদেরই মেয়ে ঐশী রহমানকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ পর্যন্ত পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে সে। ওই হত্যা মামলায় ঐশীর ছাড়াও গৃহকর্মী সুমি ও ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান ওরফে রনিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া ঐশীর আরেক বন্ধু পারভেজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৮ আগস্ট আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ঐশী নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরায় বাধা দেয়ায় বাবা-মার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল সে। বিশেষ করে মায়ের ওপর বেশ ক্ষোভ ছিল তার। তার অভিযোগ মা তাকে বেশি গালমন্দ করতো। তবে সে নিজে ওই হত্যাকা-ে অংশ নেয়নি বলেও পুলিশের কাছে দাবি করেছে ঐশী। বলেছে ,তার বন্ধু জনি ও জনির এক পরিচিত বাবা-মাকে খুন করেছে। এসব শুনে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, ঐশী ও তার বন্ধুরা ওই হত্যাকা-ে জড়িত। মরদেহ দুটি টেনেহিঁচড়ে বাথরুমে নিতে সহযোগিতা করেছিল গৃহকর্মী সুমি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর ঢাকা টাইমসটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঐশীর বয়সের তুলনায় সিনিয়রদের সঙ্গে চলাফেরা বেশি ছিল। বিভিন্ন সময় ডিজে পার্টি, নেশার আসরে গিয়ে তাদের সঙ্গে পরিচিত হয় সে। পরে আস্তে আস্তে তাদের সংস্পর্শে বেশি থাকায় অতিমাত্রায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে সে। তিনি জানান, ঐশী গত তিনদিন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য দিয়েছে সেগুলো তার বন্ধু রনি ও গৃহকর্মী সুমির কথার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তার আরও দুই বন্ধু সাইদুল ও জনিকে গ্রেপ্তার করা গেলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐশী ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত। ২০১১ সালে ওই স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল শেষ করেছে সে। কিন্তু এরপর থেকে ঐশী লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে ওঠে। এ নিয়ে প্রায়ই বাবা-মার সঙ্গে রাগারাগি করত সে। মূলত ওই সময় থেকেই পুরোপুরি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে ঐশী। পুলিশ জানায়, তার বন্ধুদের মধ্যে দু-একজন খুচরা ইয়াবা বিক্রেতা ছিল। মূলত অসৎ বন্ধুরাই তার জীবনের কাল হয়েছিল। তাদের মাধ্যমেই ইয়াবা সেবন শেখে ঐশী।
গৃহকর্মী সুমি প্রায়ই ঐশীকে ট্যাবলেট খেতে দেখেছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। প্রায়ই খুব সকালে বাসা থেকে বের হত, ফিরত অনেক রাতে। বাবা-মা বিষয়গুলো আঁচ করতে পেরে তার চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানায়, গত বুধবার সকালে ঐশী তার মাকে বলে সে ভাল হয়ে গেছে। এভাবে মাকে ম্যানেজ করে ওই দিন বিকালে বাসা থেকে বের হয়। পুলিশের ধারণা, ওইদিন বের হয়ে সে তার বন্ধুদের সঙ্গে খুনের পরিকল্পনা পাকাপোক্ত করেছিল।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট বিকালে রাজধানীর পল্টন থানার চামেলীবাগের ভাড়া ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে বাথরুম থেকে পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন